উপসচিব পদোন্নতিতে ৫০% প্রশাসন থেকে ও ৫০% অন্য ক্যাডার থেকে সুপারিশ
উপসচিব পদোন্নতিতে ৫০% প্রশাসন ও ৫০% অন্য ক্যাডার থেকে সুপারিশ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নতুন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। কমিশন ঘোষণা করেছে, উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি এখন থেকে শুধুমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। এই পদোন্নতি পদ্ধতির লক্ষ্য হলো, যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের উন্নতি নিশ্চিত করা, যাতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং মেরিট-বেস হয়ে ওঠে।
বর্তমানে, উপসচিব পদে পদোন্নতি পেতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ কোটা এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ কোটা নির্ধারিত ছিল। তবে, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্যও পদোন্নতির আরও সুযোগ তৈরি হবে, যা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও বহুমুখী এবং প্রতিযোগিতামূলক করবে।

নতুন পদোন্নতি প্রক্রিয়া: পরীক্ষা বাধ্যতামূলক
কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ও সদস্য সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এই নতুন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তারা বলেন, “উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেতে এখন থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে কর্মকর্তা যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করেছেন।” এই পরীক্ষাটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পরিচালনা করবে এবং পরীক্ষায় ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি সম্ভব হবে না।
এছাড়া, যেসব কর্মকর্তা সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করবেন, তাদের নাম ওই পদে প্রথম স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, যদি একজন কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা সর্বোচ্চ নম্বর পান, তাহলে তিনি উপসচিব পদে প্রথম স্থান অধিকার করবেন। এতে করে শুধুমাত্র যোগ্য কর্মকর্তা এগিয়ে আসবেন, যা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে।
প্রশাসনিক সংস্কারে নতুন দৃষ্টিকোণ
এই পদোন্নতি পদ্ধতি শুধুমাত্র উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে প্রযোজ্য হবে। তবে, পরবর্তী স্তরের (যেমন সচিব) পদোন্নতির জন্য সরকার নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এই পদক্ষেপটি সরকারের পক্ষ থেকে একটি মেধাভিত্তিক এবং যোগ্যতার মূল্যায়নে বেশি গুরুত্ব দেয়ার ইঙ্গিত দেয়, যা সরকারি চাকরি ব্যবস্থা আরও দক্ষ, স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
এছাড়া, কমিশন পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা তুলে দেওয়ারও সুপারিশ করেছে। বর্তমান পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় জটিলতা সৃষ্টি করে, এবং কর্মকর্তাদের চাকরির প্রক্রিয়ায় অপ্রয়োজনীয় বাধা সৃষ্টি করে। এই প্রথা তুলে দেওয়ার মাধ্যমে চাকরির প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং দ্রুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের জন্য নতুন সুযোগ
নতুন পদোন্নতি পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য আরও পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হবে। বর্তমানে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য পদোন্নতি বেশি থাকলেও, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। এতে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রশাসন ব্যবস্থায় নতুন দক্ষতা এবং প্রফেশনালিজম আসবে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
এই সংস্কারের বাস্তবায়ন হলে সরকারি প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তবে, এটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে, কারণ কর্মকর্তাদের নতুন নিয়মাবলী এবং পদ্ধতি অনুসরণ করতে সময় লাগবে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে এটি বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ এবং নৈতিকভাবে উন্নত করবে। নতুন পদোন্নতি প্রক্রিয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থায় শুদ্ধতা, স্বচ্ছতা, এবং মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করবে।
আগামী পরিকল্পনা
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন পদোন্নতি পদ্ধতি এবং অন্যান্য সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা আসতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে, বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটি নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে, যা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
এছাড়া, সরকার এই পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে জনগণের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং কর্তব্যপালন আরও শক্তিশালী করতে চায়।
মূল সংবাদঃ উপসচিব পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার ৫০ শতাংশ সুপারিশ